Theme Layout

Boxed or Wide or Framed

Theme Translation

Display Featured Slider

Yes

Featured Slider Styles

[Centred][caption]

Display Grid Slider

No

Grid Slider Styles

[style5][caption]

Display Trending Posts

Display Author Bio

Yes

Display Instagram Footer

Yes

Dark or Light Style

সপ্তাহান্তে বেড়ানোর ঠিকানা হুগলীর সুখাড়িয়া


নৈহাটিতে আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে সপ্তাহ খানেকের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঘরের মধ্যে গ্যাট হয়ে বসে আছি। শুয়ে বসে সময় কাটছে। কী করি? ঘরের ভেতর এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগে? মনে হচ্ছে, কোথাও একটু টুক করে ঘুরে আসি! একদিনে ঘুরে বাড়ি ফিরে আসার জায়গা তো বহু রয়েছে হাতের কাছে। কিন্তু কোথায় যাব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। রাতে হঠাৎ মনে হলো গুপ্তিপাড়া ও সোমড়া থেকে ঘুরে এলে কেমন হয়! সোলো ট্রিপের আদর্শ ঠিকানা এই গ্রাম।


মিত্র মুস্তৌফিদের জমিদার বাড়ি
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। অটোয় চেপে সোজা চলে এলাম নৈহাটি স্টেশনে। টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে এখন ট্রেন আসার অপেক্ষায় আছি। ন'টা পাঁচের কাটোয়া লোকাল প্ল্যাটফর্মে ঢোকা মাত্রই হুড়মুড় করে উঠে পড়লাম। গাড়ী নৈহাটী স্টেশন থেকে জুবিলী ব্রীজ পার হয়ে এল ব্যান্ডেলের দিকে। ব্যান্ডেল থেকে বলাগড় পার হয়ে ঠিক সাড়ে দশটায় ট্রেন এসে পৌঁছল সোমড়া ষ্টেশনে। কাটোয়া লাইনের একটি ছোট স্টেশন সোমড়া বাজার। ট্রেন থেকে নেমেই প্রথমে এগিয়ে গেলাম টোটো স্ট্যান্ডের দিকে। স্টেশনের বাইরে টোটো স্ট্যান্ডে এসে একটি টোটোয় উঠে পড়লাম। সোমড়ার কাছেই সুখাড়িয়া। নেহাতই এক সাদামাটা গ্রাম। এই সুখাড়িয়া গ্রামে রয়েছে একদা জমিদার মিত্র মুস্তাফিদের বাড়ি। ইতিহাসের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলেও স্থাপত্যের নিদর্শন তেমন কিছু নেই, রয়েছে মিত্র মুস্তাফি পরিবারের তৈরি কয়েকটি মন্দির। গন্তব্য সেখানেই। গ্রামের পিচ ঢালা রাস্তা ধরে টোটো চলেছে। চারদিকে শুধু সবুজ গাছপালা আর শস্যক্ষেত। গ্রামের পথ যেন সব সময়ই সুন্দর লাগে। মাঠ জুড়ে সবুজ ফসলের মাঠ, পুকুর, আমবাগান, বাঁশঝাড়... সে এক মনোরম দৃশ্য। এত সুন্দর দৃশ্য গ্রাম ছাড়া আর কোথাও দেখা যায়! কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেলাম জমিদার বাড়ির কাছে। টোটো চালক আমাকে নামিয়ে সামনের একটা রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে বলল, এই রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন আনন্দময়ী কালী মন্দির। রাস্তার উল্টোদিকেই একটা বড় পুকুর। পুকুরের বাঁকে লাল রঙের একটা মন্দির দেখতে পেয়ে সেদিকে হাঁটতে শুরু করলাম।

মন্দিরের অন্যদিকে প্রশস্ত টলটলে জলে ভরা দীঘি
পুকুরের গা ঘেঁষে চলে গেছে ইট বিছানো পথ। সেই পথ ধরে হেঁটে চলেছি। বাঁপাশে পড়ল মিত্র মুস্তৌফিদের বিশাল দোতলা বাড়ি। রাধাজীবন মিত্র মুস্তৌফির বানানো এই বাড়িটির নাম 'রাধাকুঞ্জ'। হাত বদল হয়ে আজ এটি বিশ্বাসবাড়ি নামে পরিচিত। বাড়ির বিভিন্ন অংশের কাঠামো দেখে বোঝা যায় এ বাড়ির প্রাচীন ইতিহাস কতটা গৌরবের ছিল। ঢোকার মুখে রাধাকুঞ্জের বিরাট থামওয়ালা গেট ছিল। গেটের মুখে ছাদ দেওয়া চাতাল। ভিতরে সোজাসুজি দুর্গাদালান। তিন দিক ঘেরা বিরাট দোতলা বাড়ি। নীচের ঘরগুলি এক সময় জমিদারি খাজনা আদায় ও অন্য কাজে ব্যবহৃত হত। এককালে জমিদারির আভিজাত্য আর সাবেকিয়ানা এখন আর নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটি জীর্ণ হয়ে পড়েছে। পলেস্তারা খসে পড়েছে। দরজা জানলায় বয়সের ছাপ। বাড়ির বিভিন্ন জায়গার দেওয়াল জুড়ে গাছ গাছালিতে ভরে গিয়েছে। থাম, ছাদ, পাঁচিল সবই ভগ্নপ্রায়। জমিদারি গিয়েছে কবেই; তবুও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এখনও নিয়ম মেনে দুর্গাপুজো হয় এই জমিদার বাড়িতে। ইচ্ছে ছিল রাধাকুঞ্জের ভেতরে ঠাকুরদালানটা একবার গিয়ে দেখার। কিন্তু এখন গেট বন্ধ। গেট বন্ধ, তাই সময় নষ্ট না করে বাইরে থেকে দেখে এগিয়ে চললাম মন্দিরের দিকে।

'রাধাকুঞ্জ' মিত্র মুস্তৌফিদের জমিদার বাড়ি
রাধাকুঞ্জ পেরিয়ে মন্দিরের সামনে গেলাম। মন্দিরের চারদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ঢোকার মুখে একটা লোহার গেট। গেটের ওপাশে সবুজ মাঠ। মাঠের এক পাশে বিরাট মন্দির। আধখোলা লোহার গেট পার হয়ে চলে এলাম আনন্দময়ী মন্দিরের সামনে। গিয়েই মনটা ভালো হয়ে গেল, লোক বসতি থেকে দূরে শান্ত নির্জন পরিবেশ। অনেকটা জায়গা জুড়ে মন্দির। সামনে বেশ বড় পুকুর। পুকুরের টলমলে জলের মাঝে মন্দিরের ছায়া। সুখাড়িয়া গ্রামের মন্দিরগুলির মধ্যে এই মন্দিরটিই সবার নজর কাড়ে। সকাল এগারোটা। মন্দিরের লোহার গ্রীলের দরজা তখন বন্ধ, তালা মারা।

মন্দির চত্বর

আনন্দময়ী মন্দির

সুখড়িয়া গ্রামে মিত্র মুস্তৌোফিদের তৈরি মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল আনন্দময়ী মন্দির। লাল রঙের এই মন্দিরটি পর্যটকদের ভীষণভাবে নজর কাড়ে। মিত্র মুস্তৌফিদের আদি নিবাস ছিল নদীয়া জেলার উলা বীরনগরে। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে মনোমালিন্য হাওয়ায় মুস্তৌফিরা উলা ছেড়ে বর্ধমান রাজ তিলক চাঁদ রায়ের অধীনে সুখাড়িয়াতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। তারপরই মিত্র মুস্তৌফিরা নদীয়ার রাজাদের সাথে পাল্লা দিয়ে একের পর এক মন্দির তৈরি করতে থাকেন। শোনা যায়, শুধু সুখাড়িয়া গ্রামেই তারা প্রায় বাইশটি মন্দির নির্মাণ করেন। এই বাইশটির মধ্যে আনন্দময়ীর মন্দিরই সর্বশ্রেষ্ঠ। সুখাড়িয়ার জমিদার বীরেশ্বর মিত্র মুস্তৌোফি ১৮১৩ সালে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তিন খিলানের তিনতলা বিশিষ্ট এই মন্দিরে চূড়া আছে মোট পঁচিশটি। আমাদের এই বাংলায় হাতে গুনে এরকম মন্দির আর মাত্র চারটি আছে। তার মধ্যে কালনাতেই রয়েছে তিনটি।  সেগুলি হল লালজী, কৃষ্ণচন্দ্র, গোপালজীউ মন্দির। অন্যটি রয়েছে সোনামুখীতে। শ্রীধর মন্দির। এই চারটি মন্দিরের মধ্যে প্রাচীনত্বের দিক থেকে দেখলে চতুর্থ মন্দিরটি হল সুখাড়িয়ার এই আনন্দময়ী মন্দির।
আনন্দময়ী মন্দিরে নিত্য পুজোর সময়:- সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা এবং বিকাল ৫ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত। মন্দিরের ঢোকার গেট সব সময় খোলা থাকে।
আনন্দময়ী মন্দিরের সামনে লোহার গ্রিলের দরজায় লেখা আছে, 'আনন্দময়ী ঠাকুরানী/প্রতিষ্ঠাতা/৺বীরেশ্বর মুস্তাফি/মন্দির স্থাপিত ১১৭০ সাল।' যা দেখে বোঝা যায় মন্দিরটি কত প্রাচীন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মন্দিরের তিনতলার পাঁচটি চূড়া ভেঙ্গে পড়ে। সাতাশ বছর পর মিত্র মুস্তৌোফি পরিবারের লোকেরা মন্দিরের সম্পূর্ণ সংস্কার করেন। নতুন করে সংস্কার করা হলেও পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এরপরেও মন্দিরে বেশ কয়েকবার সংস্কার হয়েছে। প্রতিবারই মন্দিরের গায়ে চেপেছে সিমেন্টের পলেস্তারা, আর রঙ। মন্দিরটি সম্পূর্ণভাবে ইটের তৈরী। মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে কিছু টেরাকোটার কাজ লক্ষ্য করা গেল। বহুবার রঙের প্রলেপ পড়ে সেগুলোর বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই প্রাচীনত্বের শিকড় বহু দূর অবধি ছড়িয়ে থাকলেও মন্দিরটি সময়ের স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেনি। মন্দিরের গায়ে এখন চড়া রঙ। টেরাকোটা ভ্যানিশ। পুরনো মন্দিরের আমেজ অনেকটাই নষ্ট হয়েছে।

আনন্দময়ী মাতা মন্দির
শান্ত নির্জন গ্রাম্য পরিবেশ। গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ মন্দির চত্বর। আর, তারই মাঝে সুদৃশ্য এই মন্দির। মন্দিরের সামনে সবুজ ঘাসের ওপর এসে দাঁড়ালাম। সামনে খোলা সবুজ ঘাসভরা মাঠ, তারপরে আমবাগান। অন্যদিকে টলটলে জলে ভর্তি পুকুর। আর এই সবুজ প্রান্তরের দু'পাশে দু-সারিতে ছয়টি করে মোট বারোটি মন্দির। এর মধ্যে দুটি পঞ্চরত্ন, বাকি দশটি আটচালা। পঞ্চরত্নের মন্দির দুটির মধ্যে একটি গণেশের। আর বাকিগুলি শিবের। মাঠের পূর্বদিকের সারির মন্দিরগুলি কিছুটা হেলে রয়েছে। কোন প্রাকৃতিক কারণে হয়তো হেলে গেছে। পুকুরের পাশে খোলা সবুজ মাঠের মাঝে লাল রঙের এই মন্দিরগুলো এক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করছে। মনটা যেন অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ভরে উঠল। এই মন্দির খোলা বন্ধের একটা নির্দিষ্ট নিয়ম ও সময় আছে বলে মনে হল না। তবে একটা সুবিধা হল, সামনে গ্রিলের দরজা থাকায় যখন খুশি মন্দিরে গেলে মা আনন্দময়ীর দর্শন পাওয়া যায় অনায়াসে।

পশ্চিমদিকের প্রথম পঞ্চরত্ন মন্দিরে আছে গণেশ বিগ্রহ

হরসুন্দরী ও নিস্তারিণী মন্দির

মন্দির থেকে বেরিয়ে এবার কোথায় যাবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। আসলে হঠাৎ করে চলে এসেছি তেমন প্ল্যান ছিল না। গ্রামের একজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় জেনে নিলাম এখানে কি কি দেখার মতো জায়গা আছে। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। ঘড়ির কাঁটাতে তখন সকাল এগারোটা। অচেনা গন্তব্যে পথ ভুলে অন্য পথে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। মন্দির থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে মেন রোড ছেড়ে পাড়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছু সময় পর একজনের দেখা মিলল। লোকটিকে জিজ্ঞেস করাতে বলল, একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন। সামনে কিছুটা গিয়ে, উঠলাম আর একটা বড় পুকুর ধারে। এটি হরসুন্দরী পুকুর। চারপাশে বড় বড় গাছ। পাশেই হরসুন্দরী মন্দির। মন্দিরের সামনে এসে দেখি দরজা বন্ধ। গেটে তালা ঝুলছে। ভেতরে, একটি নয়চূড়া নবরত্ন মন্দির। হরসুন্দরী মন্দির। বাহ্, এখানেও দেখছি চোদ্দটি মন্দির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। এক একটি সারিতে সাতটি করে মন্দির। সবকটি একই রকম নয়, দুটি পঞ্চরত্ন। বাকিগুলি আটচালা। ইতিহাসের পাতা ঘেটে জানা যায় ১৮১৪ সালে রামনিধি মিত্র মুস্তৌফি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দিরে কালীমায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা আছে। সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে এই মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। পুরোহিত মশাই এসে পুজো করে মন্দির বন্ধ করে চলে যান। অতএব বাইরে থেকেই ক্যামেরায় চেষ্টা করলাম ছবি তুলে রাখতে। মন্দিরের সামনে ডানদিকে ট্রাস্টি বোর্ডের অফিস।

হরসুন্দরী মন্দির
হরসুন্দরী মন্দির দেখে প্রণাম করে ফিরে আসছি তখন গ্রামেরই একজন লোক ওই পথে আসছিলেন। আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললেন, পাশের মন্দিরটি দেখে আসতে পারেন। ওটা নিস্তারিণী কালী মন্দির। নিস্তারিণী মন্দিরটিও নয়চূড়া নবরত্ন মন্দির। মন্দিরটির গঠন হরসুন্দরী মন্দিরের ন্যায় হলেও সামান্য পার্থক্য আছে। এর বিশেষত্ব মন্দিরটি পশ্চিমদুয়ারি। ১৯৪৬ সালে কাশীপতি মুস্তৌফি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের চারিদিকে আগাছার জঙ্গল। অত্যন্ত অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে আছে। এখানেও মন্দিরে ঢোকার গেট বন্ধ। গেট থেকেই বিদায় নিতে হল। শুধু বাইরে থেকে কিছু ছবি নিয়ে নিলাম।
হরসুন্দরী এবং নিস্তারিণী মন্দিরে নিত্য পুজোর সময়:- সকালে ৯ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যায় ৫ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত। মন্দিরের ঢোকার গেট কেবলমাত্র পুজোর সময়ে খোলা থাকে।
একটা জিনিস বলে রাখা ভালো, এই মন্দির দুটি রামনিধি এবং কাশিগতি মিত্র মুস্তৌফির ব্যাক্তিগত সম্পত্তি। তবে তাদের দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী পুজো বা দর্শন করতে পারবেন। পুজোর সময় ছাড়া এই মন্দির দুটি বন্ধ থাকে। অন্য সময় পুজো বা দর্শন করতে হলে আগে থেকে পুরোহিতের কাছে অনুমতি নিতে হবে।

নিস্তারিণী কালী মন্দির
হরসুন্দরী মন্দিরের কাছে আবার ঐ লোকটির সাথে দেখা। তার মুখে শুনলাম গ্রামের বেশ কিছুটা ভেতরে আরও একটি মন্দির আছে। ভরদুপুরে রাস্তায় লোকজন বেশি নেই। অজানা গ্রামের পথে ঘুরতে আমার বেশ ভালো লাগে। কিন্তু এতক্ষণ ধরে গ্রামের পথে এলাম, কই! কোনো মন্দির দেখছি না তো! লোকটি যেভাবে বলেছিল আমি তো ঠিক সেভাবেই গ্রামের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। দেখি সামনে একজন হেঁটে আসছে। পাশে একটা সাইকেল। চাকা পাংচার হয়েছে, তাই সাইকেল ঠেলে আনছে। জিজ্ঞেস করলাম এদিকে কোথাও মন্দির রয়েছে? লোকটি হাত তুলে দেখিয়ে বলল, ওই যে গাছগুলো দেখা যাচ্ছে, ওর পেছনে। এটাই এই গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির। লোকটির কথা শুনে একটা বিশাল বড় বট গাছ দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।

ট্রাস্টি বোর্ডের অফিস

সিদ্ধেশ্বরী মন্দির

সুখাড়িয়া গ্রামের এক প্রান্তে এই সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মন্দির। গ্রামের মানুষ মা সিদ্ধেশ্বরীকে অত্যন্ত জাগ্রত মনে করে শ্রদ্ধাভক্তি করেন। এটি অতি প্রাচীন এক কালী মন্দির। তবে বহুবার সংস্কারের ফলে এই মন্দিরে এখন কোন প্রাচীনত্বের ছাপ নেই। মন্দিরের সামনে ডালপালা মেলে ধরা এক বিরাট বটগাছ। এ বটগাছের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক সাধকের নাম। সুদুর অতীতে সৌম্য কান্তি নামে জনৈক এক সাধক এই বট গাছের তলায় শক্তিদেবী কালীর সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। সেটি আজ কালের নিয়মে অসংখ্য শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আজও সেখানে দাড়িয়ে আছে। মন্দিরের এই পাথরের তৈরি দেবী মূর্তিটি তারই প্রতিষ্ঠা করা। মন্দিরের গায়ে দুটি শ্বেতপাথরের ফলকে দেবীর প্রতিষ্ঠার সন তারিখ এবং প্রতিষ্ঠাতার ও দেবীর নাম লেখা আছে। এই মন্দিরের বহুবার সংস্কার হলেও মন্দিরটি ১৭৮৫ সালে প্রথম তৈরি হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। তখনকার জমিদার মুস্তৌফি পরিবারের দান করা জমিতে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির। তাদেরই আর্থিক সহাতায় তৈরি খিলান করা এক কোঠা ঘরে প্রতিষ্ঠা করা হয় সেই চিন্ময়ী মূর্তির। এর প্রায় এক শতক পরে ১৩০৩ সনে সোমড়ার এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি জীতেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় মহাশয় দেবী মন্দিরটি সংস্কার করেন। এর বেশ কয়েক বছর পরে ১৩৮৪ সনে ভক্তদের দানের অর্থ দিয়ে মন্দিরটি পুনরায় সংস্কার করা হয় এবং মন্দিরের আরাধ্য দেবীকে সাজিয়ে তোলা হয় সিদ্ধেশ্বরী রূপে। পরবর্তীতে ১৪১৫ সনে স্থানীয় লোকেদের সক্রিয় প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে আজকের এই সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মন্দিরটি। তথ্য অনুযায়ী, ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই জুলাই শুক্রবার ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব স্টিমারে গঙ্গায় ভ্রমণ করার সময় সোমড়া পর্যন্ত এসেছিলেন। শোনা যায়, তখন তিনি এই মন্দিরের মা সিদ্ধেশ্বরী কালীকে দর্শন করেন।

সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
আগেই প্ল্যান ছিল সোমড়া ও গুপ্তিপাড়া একই সঙ্গে ঘুরে দেখে নেব। মন্দির দর্শন করে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে স্টেশনের দিকে পা বাড়য়েছি, ঠিক সেই সময়ে দেখি টোটোতে চড়ে এক মহিলা স্টেশনের দিকে যাচ্ছেন। টোটো রিজার্ভ করে এসেছিলেন মায়ের মন্দিরে পুজো দিতে। উনার অনুমতিতে ওই টোটোয় চেপে বসলাম। স্টেশনে পৌঁছতেই দেখি কাটোয়া লোকাল প্লাটফর্মে ঢুকছে। আগেই ট্রেনের টিকেট কাটা ছিল। দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে চেপে বসলাম। পরে জানতে পেরেছি, এই ট্রেন মিস করলে আমাকে পরের লোকাল ট্রেনের জন্য প্রায় দু ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো এখানে। টোটো চালককে ধন্যবাদ, জোরে চালিয়ে না এলে এই ট্রেন ধরতে পারতাম না।

সোমড়া বাজার
» পথ নির্দেশিকা
© ছবি ও লেখাঃ- অরবিন্দ পাল (তথ্যসূত্রঃ- ‘হুগলী জেলার পুরাকীর্তি’ - নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য)
Arabinda Pal
4 Comments
Share This Post :

You Might Also Like

4 comments:

[name=Arabinda Pal] [img=https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEia50rmuKEAcbGUbQKvAbzUmdviiIhm-LeVlsEEdFx_xtGfyvx8O02yFVuJemgswzSA8PoMcN-XW0AcinKr9iq28lHK43Z4TFFyL7pJyGGxLNx9LGn0cLvPz0lUJzNrWBo9n_NyxGLjDII/h120/IMG_2788.jpg] [description=পর্যটক হিসাবে নয়, একজন ভ্রমণকারী হিসাবে বেড়ানোটা আমার কাছে একটা নেশা এবং ফটোগ্রাফিতেও আমার ভীষণ শখ। তাই একজন ভ্রমণকারী হিসাবে আমার এই ব্লগে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা ও ছবিগুলো যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনাদের মতামত কমেন্টসের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।] (facebook=https://www.facebook.com/groups/2071066419824586/user/100002484831922) (twitter=Twitter Profile Url) (instagram=https://www.instagram.com/arabindapal2020/) (bloglovin=Blogvin Profile Url) (pinterest=https://www.pinterest.com/arabindapalbrb/) (tumblr=Tumblr Profile Url)

Follow @Arabinda Pal