Theme Layout

Boxed or Wide or Framed

Theme Translation

Display Featured Slider

Yes

Featured Slider Styles

[Centred][caption]

Display Grid Slider

No

Grid Slider Styles

[style5][caption]

Display Trending Posts

Display Author Bio

Yes

Display Instagram Footer

Yes

Dark or Light Style

আকাশ ছুঁয়ে আজও দাঁড়িয়ে বহুলাড়ার সিদ্ধেশ্বর মন্দির


শুধু বিষ্ণুপুর নয়, গোটা বাঁকুড়া জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পুরাকীর্তির বহু নিদর্শন। এই জেলারই একটা গ্রাম 'বহুলাড়া'। সাধারণ গ্রামের মানুষের কাছে 'বোল্যাড়া' বলে পরিচিত। কিন্তু কী আছে এই বহুলাড়ায়? একবার বিষ্ণুপুরে মন্দিরের খোঁজে গিয়ে জানতে পারি যে বাঁকুড়ার এই বহুলাড়া গ্রামে জৈন আমলের একটি প্রাচীন মন্দির আছে। মন্দিরটি এখন সিদ্ধেশ্বর শিবের মন্দির নামে পরিচিত হলেও প্রথমদিকে এটা জৈন মন্দির ছিল। এই রাঢ়দেশে একসময় জৈন ধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। জৈনরা 'রাঢ়' শব্দটিকে 'লাড়' বলতেন। এই 'লাড়' শব্দ থেকেই 'লাড়া' শব্দটি এসেছে। অনেকের কাছে এই মন্দির এখনও অজানা। বিষ্ণুপুরের প্রায় সব দর্শনীয় স্থানই আমার ঘোরা, কিন্তু শহর থেকে কিছু দূরে বহুলাড়ার এই মন্দির আমার দেখা হয়নি। শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগ পেয়ে ঘুরে এলাম বহুলাড়া থেকে।

ইতিহাস আঁকড়ে রয়েছে বহুলাড়ার মন্দির
শনি-রবি পরপরপ দুদিন ছুটি। উইকএন্ড ট্রিপে এবার ভাবলাম বাইক নিয়ে কোথাও গেলে কেমন হয়। সিদ্ধেশ্বর শিবের মন্দিরটির সন্ধান পাওয়ার পর থেকেই সেখানে যাওয়ার একটা ইচ্ছে জেগে ছিলো মনে। সকাল সকাল বাইকে চেপে বেরিয়ে পড়লাম বহুলাড়ার সেই প্রাচীন মন্দিরের খোঁজে। কিন্তু কোথায় এই বহুলাড়া? জানা যায় যে বিষ্ণুপুর আর বাঁকুড়া শহরের মধ্যে ওন্দার কাছে কোনও এক জায়গা। 'ওন্দাগ্রাম' নামটা আমার পরিচিত। বিষ্ণুপুর থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার সময় দেখেছি। বাস যায়, রেল স্টেশন আছে। পরিচিত রাস্তায় বিষ্ণুপুর এসে তারপর বাঁকুড়া যাওয়ার রাস্তা ধরে রামসাগর পেরিয়ে চলে এলাম 'ওন্দা'। স্থানীয় লোকেরা 'ওঁদা' বলে।

ওন্দা চৌমাথার মোড়ে এসে কোনদিকে যাবো বুঝতে পারছিলাম না। এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেখে বহুলাড়া যাওয়ার পথ জেনে নেওয়ার চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমার উচ্চারণটা যেন তার কাছে দুর্বোধ্য মনে হল। কাছাকাছি আরও দুটো লোককে দেখে মন্দিরের কথা জিজ্ঞেস করলাম। ওরা বলছিল বেউল্যাড়া না কী যেন! ঠিক বুঝতে পারলাম না। তারপর জিজ্ঞেস করলাম এখানে পুরাতন মন্দির কোথায় আছে? হঠাৎ পিছন থেকে একজন বলে উঠলো! হ্যাঁ, সেরকম একটা মন্দির আছে বটে...। এখান থেকে এই ডানদিকের রাস্তা ধরে একেবারে সোজা চলে যান। বাজার পেরিয়ে স্টেশন রোড ধরে খানিক এগিয়ে দেখি সামনে লেভেল ক্রসিং। তারপর মাঠ ঘাট পেরিয়ে অনেক দূর আসার পর পেলাম একটা গ্রাম। গ্রামের নাম পাত্রহাটি। একজন সাইকেল-আরোহীকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, বহুলাড়া মন্দিরটা এই দিকেই তো? তার কাছে জানা গেলো, একটু এগিয়ে ডান হাতে যেতে হবে। কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখতে পেলাম একটা তিনমাথার মোড়। ওখান থেকে ডানদিকের একটা সরু পাকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। খানিকটা গিয়ে একটা বাঁক ঘুরতেই চোখে পড়ল বেশ বড় এক মন্দির।

প্রাচীন ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে
সত্যিই বেশ বড় মন্দির। সামনে 'আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া'র একটা বোর্ড টাঙানো আছে। বহুলাড়ার এই মন্দিরটি এখন হিন্দুদের শিব মন্দির হিসেবে পরিচিত হলেও অতীতে এটা ছিল জৈনদের। এই সিদ্ধেশ্বর শিবের মন্দিরটি ওড়িশার রেখ-দেউল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি। রেখ-দেউলটি চারপাশের জমি থেকে খানিকটা উঁচুতে, একটা সমতল জায়গার ওপর অবস্থিত। মন্দিরের বাইরের দেওয়াল জুড়ে সুন্দর কারুকাজ করা। মন্দিরটি পোড়ামাটির ছোট ছোট ইট দিয়ে তৈরি এবং ইটের গায়ে নিপুণ খোদাই কাজগুলো পঙ্খের পলেস্তারা দিয়ে ঢাকা। দেওয়ালের গা থেকে পলেস্তারা খসে পড়ায় অনেক জায়গায় পোড়ামাটির নকশা টালিগুলো বেরিয়ে পড়েছে। মন্দিরের চারপাশে চোখ ফেরাতেই দেখা গেল মাকড়া পাথরের ছোট ছোট কয়েকটি স্তম্ভ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মূল মন্দিরের চারপাশে প্রথাগতভাবে তৈরি যেসকল উপ-মন্দির ছিল, এগুলো তার অবশেষ হতে পারে।

বাইরের দেওয়াল জুড়ে সুন্দর কারুকাজ করা
ইটের তৈরি এই বিশাল রেখ-দেউলকে বাঁকুড়া জেলার শ্রেষ্ঠ পুরাকীর্তি বলা যেতে পারে। শুধু বাঁকুড়া কেন, সারা বাংলায় রেখ-দেউলের যে কয়েকটি নিদর্শন আছে তার মধ্যে বহুলাড়ার এই দেউলটি সবচেয়ে সুন্দরতম ইটের মন্দির। কোন প্রতিষ্ঠালিপি না থাকায় মন্দিরটির নির্মাণকাল নিয়ে নানা অভিমত আছে। প্রত্নতাত্বিকরা মনে করেন এই মন্দিরটি পালযুগের তৈরি। এটা একটি শিব মন্দির হলেও ইতিহাসবিদরা নিশ্চিত নন যে নির্মাণকালে কোন দেবতার প্রতি এটিকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। মন্দিরটি হিন্দুদের না জৈনদের দ্বারা তৈরি সে বিষয়েও নিশ্চিত কিছু বলা যায় না।

খোদিত ইটের কাজ এবং পঙ্খ-পলেস্তারা
মন্দিরের পাশে রাস্তার সমতলে অনেকগুলো ইটের ছোটো ছোটো স্তূপ দেখতে পাওয়া গেলো। ভারতের প্রত্নতত্ব বিভাগ 'দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া'র পক্ষ থেকে খোঁড়াখুঁড়ি করে এই স্তূপগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে, এখান থেকে জৈনমূর্তিও পাওয়া গেছে। প্রায় উনিশটি এরকম স্তুপ পাওয়া গেছে তারমধ্যে ষোলোটি গোলাকার স্তূপ। বৌদ্ধ শ্রমণদের এরকম গোলাকার স্তুপে সমাধিস্থ করা হতো। এই স্তূপ অর্থাৎ চৈতগুলো দেখে ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন এটা ছিল বৌদ্ধ মন্দির। একসময় বৌদ্ধ ও জৈন উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ এই এলাকায় বসবাস করতো ফলে এখানে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রভাব ছিল। জৈনদের মধ্যেও সেকালে স্তূপপূজো দেখা যেতো। মন্দিরের গর্ভগৃহে রাখা পার্শ্বনাথের মূর্তি দেখে অনেকে এটাকে জৈন মন্দির বলেই অনুমান করেন। পরবর্তীকালে পাল রাজাদের আমলে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রভাব কমে আসে এবং ধীরে ধীরে শৈব্যধর্মের প্রভাব বাড়তে থাকে। অনেকের ধারণা ঐ সময় মন্দিরে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং হিন্দু মন্দির রূপে সিদ্ধেশ্বর শিবের নামে পরিচিতি পেয়েছে। মন্দিরের দরজা বন্ধ। তাই ভিতরে কোন দেবতার বিগ্রহ বা মূর্তি আছে বুঝতে পারলাম না। মন্দিরের দেবতাকে প্রণাম জানিয়ে এবার ফেরার পথ ধরি।

মন্দিরের পাশে ইটের সমাধি স্তূপ
দেখেশুনে, ছবি তুলে যখন ফিরে আসছি তখন আলাপ হলো এক সোলো ট্রাভেলারের সাথে। মাঝবয়সী ভদ্রলোক, আমার মতো আঞ্চলিক ইতিহাসের খোঁজে বর্ধমান থেকে বাইক চালিয়ে এখানে এসেছেন। আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি আমাকে আরও এক প্রাচীন মন্দিরের সন্ধান দিলেন। বহুলাড়া থেকে বেরিয়ে এবার চললাম সেই প্রাচীন মন্দিরের খোঁজে।

বাঁকুড়ার শ্রেষ্ঠ পুরাকীর্তি...ইটের তৈরি এই রেখ-দেউল
» পথ নির্দেশিকা
© ছবি ও লেখাঃ- অরবিন্দ পাল (তথ্যসূত্রঃ- 'পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি' - বিনয় ঘোষ, 'বাঁকুড়া জেলার ইতিহাস' - অমিয় কুমার বন্দোপাধ্যায়)
SIDDHESHWAR TEMPLE, BAHULARA, BANKURA, WEST BENGAL
Arabinda Pal
1 Comments
Share This Post :

You Might Also Like

1 comment:

[name=Arabinda Pal] [img=https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEia50rmuKEAcbGUbQKvAbzUmdviiIhm-LeVlsEEdFx_xtGfyvx8O02yFVuJemgswzSA8PoMcN-XW0AcinKr9iq28lHK43Z4TFFyL7pJyGGxLNx9LGn0cLvPz0lUJzNrWBo9n_NyxGLjDII/h120/IMG_2788.jpg] [description=পর্যটক হিসাবে নয়, একজন ভ্রমণকারী হিসাবে বেড়ানোটা আমার কাছে একটা নেশা এবং ফটোগ্রাফিতেও আমার ভীষণ শখ। তাই একজন ভ্রমণকারী হিসাবে আমার এই ব্লগে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা ও ছবিগুলো যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনাদের মতামত কমেন্টসের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।] (facebook=https://www.facebook.com/groups/2071066419824586/user/100002484831922) (twitter=Twitter Profile Url) (instagram=https://www.instagram.com/arabindapal2020/) (bloglovin=Blogvin Profile Url) (pinterest=https://www.pinterest.com/arabindapalbrb/) (tumblr=Tumblr Profile Url)

Follow @Arabinda Pal