Theme Layout

Boxed or Wide or Framed

Theme Translation

Display Featured Slider

Yes

Featured Slider Styles

[Centred][caption]

Display Grid Slider

No

Grid Slider Styles

[style5][caption]

Display Trending Posts

Display Author Bio

Yes

Display Instagram Footer

Yes

Dark or Light Style

হুগলীর ইমামবাড়া


হুগলীর ইমামবাড়া একটা প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান। বিখ্যাত দানবীর হাজী মহাম্মদ মহসিন এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ১৮৪১ সালে এই ইমামবাড়ার নির্মাণকাজ শুরু হয়। কেরামত উল্লাহ খান এর স্থপতি ছিলেন এবং এটি নির্মাণ করতে প্রায় কুড়ি বছর সময় লেগেছিল বলে জানা যায়। নৈহাটি-ব্যান্ডেলের সংযোগকারী জুবিলী ব্রিজের উপর দিয়ে ট্রেনে করে বহুবার হুগলি নদীর এপার ওপার করেছি, নজর এড়িয়ে অনেকবার ইমামবাড়ার পাশ দিয়ে গিয়েছি, তবে তার দর্শন হয়নি। উদ্যেশ্যহীন ভাবে চলার পথে একদিন কি খেয়াল হলো ট্রেন থেকে হঠাৎ হুগলীঘাট স্টেশনে নেমে পড়লাম। শুনেছি এখানেই হুগলির সেই বিখ্যাত ইমামবাড়া রয়েছে। কিন্তু কোথায়? তা সঠিক জানা নেই। হুগলীঘাট স্টেশনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি টোটোওয়ালাকে বলতেই ২০ টাকায় নিয়ে গিয়ে পৌছিয়ে দিলো একদম ইমামবাড়া গেটের সামনে। খুবই সামান্য দূরত্ব, হাঁটা পথ; কিন্তু না চেনা থাকলে যা অবস্থা হয়। গেটের সামনে টিকিট হাতে বসে থাকা এক ব্যক্তির কাছে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম।

গেটের সামনে নামলাম
ইমামবাড়া ভবনটি দোতলা। প্রবেশের মুখে উঁচু দুটি মিনার এবং তার মাঝে ক্লক টাওয়ার। প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকেই নজরে পড়লো ইমামবাড়ার চওড়া চাতাল ও আয়তাকার দালান। দু’পাশে সারবন্দি ঘর। ঘরগুলির বেশির ভাগই দেখা গেলো অব্যবহৃত, ধুলোময়লায় ভর্তি। ইমামবাড়ার ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি কৃত্রিম জলাধার ও তার মাঝখানে একটি চমৎকার ফোয়ারা। দেখে মনে হলো ফোয়ারাগুলো এখন অকেজো এবং সেগুলো থেকে কোনও জল বেরোয় না। জলাশয়ের জলের রং সবুজ হয়ে গেছে। জলাধারের জলে ইমামবাড়ার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। একজন ফটো লাভার হিসেবে যা আমার কাছে একটি উপরি-পাওনা।

ক্লক টাওয়ার
জলাশয়ের বাঁদিকে শরবতখানা, ডানদিকে তাজিয়াখানা। মাঝখানে এক বিশাল উপাসনাগৃহ যার নাম জরিদালান। বেলজিয়াম থেকে আনা অসংখ্য রংবেরঙের ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো এই জায়গাটি খুবই আকর্ষণীয়। জরিদালানের দেয়ালে রয়েছে অসংখ্য খোদাই করা জটিল নকশা ও কুরআনের আয়াত। ইমামবাড়া চত্বরে ছবি তোলা গেলেও এই জারিদালানের ভিতরে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। ক্যামেরা হাতে দেখে সেখানে উপস্থিত একজন ব্যক্তি আমাকে আগে থেকেই জানিয়ে দেয় যে জারিদালানের ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ।

জরিদালান ও তাজিয়াখানা
ইমামবাড়ার অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো ক্লক টাওয়ার। ১৫২ খানা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয় এই টাওয়ারের ছাদে। উঁচু দুটি মিনারের মাঝে ১৫০ ফুট উঁচুতে বসানো রয়েছে একটি ঘড়ি। ভেতরে ঢোকার পর আমার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই উঁচু মিনারের উপরে ওঠা। সিঁড়ি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এটা বুঝতে পেরে, যার কাছ থেকে টিকিট নিয়েছিলাম সে আমাকে উপরে ওঠার পথ দেখিয়ে দিল। মিনারের উপরে ওঠার জন্য পুরুষ ও মহিলাদের একসাথে প্রবেশ নিষেধ। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য দুই দিক থেকে আলাদা প্রবেশপথ রয়েছে। এখানে আমার মতো ভ্রমণপিপাসু একজনকে সঙ্গী হিসাবে পেয়ে গেলাম, তবে উনি আমার মতো ট্রেনে নয় বাইকে করে এসেছিলেন শুধুমাত্র ফটোগ্রাফির জন্য।

শরবতখানা
প্রায় দেড়শোর উপরে সিঁড়ি ভেঙে এই মিনারের ওপরে উঠতে হবে। সিঁড়ির পর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। সিঁড়ির ধাপি গুলো সঙ্কীর্ণ এবং বড্ড খাঁড়া খাঁড়া। প্রথম দিকে যে গতিতে উঠছিলাম শেষের দিকে প্রায় দম ফুরিয়ে গিয়েছিলো আর কিছুতেই পারছিলাম না; অবশেষে পারলাম। ভিউ পয়েন্ট এর দরজা বন্ধ ছিল। ছোট্ট একটা খিলান থেকে ইমামবাড়ার জরিদালান ও তার চারপাশের কিছু দৃশ্য দেখা যায়।

জরিদালান ও হুগলি নদী
দূরে হুগলি নদীর উপরে জুবিলি সেতু দেখা যাচ্ছে। ১৩২ বছরের পুরানো এই সেতু। এ রাজ্যের অন্যতম পুরনো আর ঐতিহ্যের। ইংল্যান্ডের Hawks Crawshay & Sons এর তত্বাবধানে এই সেতুটি তৈরি হয়েছিল। জুবিলি সেতুর পরিচিতি শুধু প্রাচীন বলেই নয়। প্রযুক্তিগত অভিনবত্বের জন্যও বিখ্যাত এই সেতু। নাট-বোল্টহীন সেতুটি তৈরি হয়েছিল বিশেষ প্রযুক্তিতে। সেই অভিনবত্বের জন্য দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের কাছে বিস্ময় এই সেতু। ১৮৮২ সালে এই রেল সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। উদ্ধোধন হয় ১৬ই ফেব্রুয়ারী ১৮৮৭ সালে। রানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বের পঞ্চাশতম বর্ষে সেতুটি নির্মিত হয়েছিল বলে সেতুটির নাম রাখা হয়েছিল জুবিলি ব্রিজ।

টাওয়ার থেকে দেখা জুবিলি ব্রিজ
মিনার দুটির উপরে ঠিক মাঝখানে রয়েছে এক বিশাল ঘড়ি। ইমামবাড়া দর্শনের মূল আকর্ষণ এই ঘড়ি। লন্ডনের বিগ বেনের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘড়ি। ঘড়ির ঠিক নিচের তলায় সিঁড়ির ফাঁকফোকর দিয়ে দেখা গেলো মেশিন ঘরে রয়েছে এই ঘড়ির যন্ত্রপাতি ও ঘন্টা। ১৮৫২ সালে সৈয়দ কেরামত আলী মেসার্স ব্ল্যাক অ্যান্ড হেয়ার কোম্পানির কাছ থেকে ১১ হাজার ৭২১ টাকায় এই বিশাল ঘড়িটি কিনেছিলেন। প্রসঙ্গত, লন্ডনের বিখ্যাত বিগ বেন ঘড়িটিও এই কোম্পানি তৈরি করেছিল। ঘড়িটিতে সপ্তাহে অন্তত একবার দম দিতে হয়। আর এই দম দিতে কমপক্ষে দু'জন লোকের প্রয়োজন হয়। চাবিটির ওজন প্রায় ২০ কেজি। মেশিন ঘরের উপরে বিভিন্ন মাপের তিনটি ঘন্টা রয়েছে, যার ওজন যথাক্রমে ৮০মণ, ৪০মণ, এবং ৩০মণ। সবচেয়ে বড় ঘন্টাটি প্রতি ঘন্টায় বাজে এবং মাঝারি ও ছোট ঘন্টা দুটি প্রতি ১৫ মিনিটের ব্যবধানে বাজে।

বারান্দা পেরিয়ে গঙ্গার দিকে চললাম
জরিদালানের পাশ দিয়ে একটি সরু রাস্তা নদীর দিকে চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে ইমামবাড়ার পিছনের দিকে যাওয়া যায়। পাশেই রয়েছে দোতলা বাড়ি। এটি ইমামবাড়ার পিছনের দিক। এই বাড়ির বাইরের দেওয়ালের উপরের অংশে ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় হাজী মহম্মদ মহসিনের আসল তোলেয়াতনামার প্রতিলিপি খোদাই রয়েছে।

গঙ্গার দিকে ইমামবাড়ার অংশ
একটু এগিয়ে হুগলি নদীর দিকে যাওয়ার পথে দেখলাম আরও একটি ঘড়ি রয়েছে, এটি সূর্য ঘড়ি। ফুট তিনেক উঁচু এই ঘড়িটিতে সূর্যের ছায়া দেখে সময় হিসাব করা যায়। সূর্যের গতিবিধির উপর নির্ভর করে এই ঘড়ির সময়। ভারতে প্রাচীন কাল থেকেই এই সূর্যঘড়ির চল রয়েছে। জানা যায় মূল ঘড়িতে পিতলের ফলক ছিল, বর্তমানে সেখানে গিয়ে তার দেখা পায়নি। পিতলের ফলক চুরি যাওয়ার পরে তাতে পাথরের ফলক লাগানোতে এখন মিনিট পনেরো সময়ের পার্থক্য হয়। ইসলামি স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের সুন্দর এই নিদর্শন এবং ঘড়ি দেখতে বহু ভ্রমণপিপাসু মানুষ আজও এখানে আসেন।

সূর্যঘড়ি
ইমামবাড়া থেকে বেরিয়ে সোজা বাঁদিক ধরে হেঁটে সামান্য কিছুদূর এগোতেই একজায়গায় লেখা দেখলাম দানবীর হাজী মোহাম্মদ মহসিন ও তার পরিবারের আত্মীয় স্বজনের সমাধি। ইতিহাসকে জানার আগ্রহে জায়গাটা দেখে এলাম। বর্তমনে এই জায়গাটিকে ভ্রমণার্থীদের জন্য সরকারি তত্বাবধানে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। এখানে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করার পর আবার ইমামবাড়ায় ফিরে এসে টোটোতে চেপে ট্রেন ধরার জন্য হুগলি ঘাট স্টেশনে এসে অপেক্ষা করতে থাকলাম।

হাজী মোহাম্মদ মহসিন ও তার পরিবারের মকবরা (সমাধিসৌধ)
» প্রয়োজনীয় তথ্য

এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা এবং সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ইমামবাড়া খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা।

» পথ নির্দেশিকা
© ছবি ও লেখাঃ- অরবিন্দ পাল।
IMAMBARA, HOOGHLY, WEST BENGAL
Arabinda Pal
0 Comments
Share This Post :

You Might Also Like

No comments:

Post a Comment

[name=Arabinda Pal] [img=https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEia50rmuKEAcbGUbQKvAbzUmdviiIhm-LeVlsEEdFx_xtGfyvx8O02yFVuJemgswzSA8PoMcN-XW0AcinKr9iq28lHK43Z4TFFyL7pJyGGxLNx9LGn0cLvPz0lUJzNrWBo9n_NyxGLjDII/h120/IMG_2788.jpg] [description=পর্যটক হিসাবে নয়, একজন ভ্রমণকারী হিসাবে বেড়ানোটা আমার কাছে একটা নেশা এবং ফটোগ্রাফিতেও আমার ভীষণ শখ। তাই একজন ভ্রমণকারী হিসাবে আমার এই ব্লগে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা ও ছবিগুলো যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনাদের মতামত কমেন্টসের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।] (facebook=https://www.facebook.com/groups/2071066419824586/user/100002484831922) (twitter=Twitter Profile Url) (instagram=https://www.instagram.com/arabindapal2020/) (bloglovin=Blogvin Profile Url) (pinterest=https://www.pinterest.com/arabindapalbrb/) (tumblr=Tumblr Profile Url)

Follow @Arabinda Pal