Theme Layout

Boxed or Wide or Framed

Theme Translation

Display Featured Slider

Yes

Featured Slider Styles

[Centred][caption]

Display Grid Slider

No

Grid Slider Styles

[style5][caption]

Display Trending Posts

Display Author Bio

Yes

Display Instagram Footer

Yes

Dark or Light Style

ধারে-কাছে একদিনের বেড়ানো বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির


মাদের ধারে-কাছে অনেক সুন্দর সুন্দর বেড়ানোর জায়গা আছে যেখানে সকালে বেরিয়ে বিকালে ফিরে আসা যায়। এই রকম একটা সুন্দর ঘোরার জায়গার সন্ধান পেয়েছিলাম বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির। ব্যান্ডেল থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে হুগলী নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ বংশবাটী যার বর্তমান নাম বাঁশবেড়িয়া। সময় করে রবিবারের একটি ছুটির দিনে ক্যামেরাকে সঙ্গী করে একাই বেরিয়ে পড়লাম বাঁশবেড়িয়ার উদ্দেশ্যে। হুগলী ঘাট স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে একটা শেয়ার অটো ধরে চলে এলাম বাঁশবেড়িয়াতে। মন্দিরের কাছে ঐ অটো যায় না। মেন রোডের ধারে হংসেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার একটি মোড়ে নামিয়ে দিলো।

পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেলাম মন্দিরে
অটো থেকে নেমে রাস্তার মোড় থেকে প্রায় দশ মিনিট পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেলাম এক প্রাচীন গড়বাড়ির দুর্গের তোরণ দ্বারের সামনে। হংসেশ্বরি মন্দিরে ঢোকার মুখে এই তোরণ দ্বার, যা আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে। ওপরে সুবিশাল নহবতখানা। সংস্কার আর বয়সের ভারে নহবতখানায় জীর্ণতার ছাপ। দেওয়ালের গা থেকে খসে পড়ছে মলিন পলেস্তারা। ফটকের ওপারে দাঁড়িয়ে আছে বাঁশবেড়িয়া রাজবাড়ি। তার ঠিক ডানদিকে রয়েছে হংসেশ্বরি মন্দির।

জীর্ণ নহবতখানা
মন্দির ঢোকার কিছুটা আগে একটা জলাশয় পড়ে, বোঝা যায় রাজবাড়ি আর মন্দির সবই একটা সময়ে পরিখা দ্বারা আবৃত ছিলো। সেই পরিখা আজ আবর্জনায় ভরা। রাজবাড়ির তোরণ দ্বারের পাশে পুজো সামগ্রীর সার সার দোকান। সেখানে মায়ের নৈবেদ্যর ডালা, ফুল-মালা, সিঁদুর-আলতা ইত্যাদি পাওয়া যায়। পুজো দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল না।

দূর্গের প্রবেশ দ্বার
গরবাড়ির প্রবেশ দ্বার পেরিয়ে চোখে পড়লো একটি রাজবাড়ির ধংসাবশেষ। এটি বংশবাটীর রায় পরিবারের রাজবাড়ি। এই রাজ পরিবারের আদি নিবাস ছিল ভাগীরথীর তীরে বর্ধমানের পাটুলি গ্রামে। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ রামেশ্বর রায় সম্রাট আওরঙ্গজেবের নিকট যথাসময়ে রাজ-সরকারের রাজস্ব প্রেরণ করায় সম্রাট তার কাজে বিশেষভাবে খুশি হয়ে ১৬৭৩ খ্রীষ্টাব্দে তাঁকে সম্মানসূচক 'রাজা-মহাশয়' উপাধি প্রদান করেন। এবং এই 'রাজা' উপাধি পুরুষানুক্রমে বংশের জ্যেষ্ঠপুত্রগণ ব্যবহার করতে পারবেন। তারপরেই রামেশ্বর রায় পাটুলির পিতৃপুরুষের ভিটে ছেড়ে আজকের বাঁশবেড়িয়া অর্থাৎ তথাকথিত বংশবাটীতে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন।

রাজা নৃসিংহের তৈরী পুরাতন রাজবাড়ী
রামেশ্বর রায় বাঁশবেড়িয়ার জমিদার থাকাকালে গোটা বাংলা মারাঠা বর্গি আক্রমণে শ্মশানে পরিণত হয়। শোনা যায় তখন মারাঠা শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তিনি এখানে একটি বাঁশবন পরিষ্কার করে পরিখা বেষ্টিত এক দূর্গ বানিয়েছিলেন। যা থেকে এই অঞ্চলটির নাম হয় বাঁশবেড়িয়া। দুর্গটি পূর্বে 'গড়বাড়ী' নামে পরিচিত ছিল। মুঘল আমলের সেই 'গড়বাড়ী' কালের নিয়মে আজ তার গৌরব হারিয়েছে। এই দূর্গের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা যোদ্ধাদের কোন কোন পরিবার এখনো এই বাঁশবেড়িয়াতেই বসবাস করেন।

রাজবাড়ীর অভ্যর্থনা গৃহ
জীর্ণ রাজবাড়ী ও তার আশপাশ একটু ঘুরে চলে এলাম মুল মন্দিরে। নির্জন পরিবেশ, সুন্দর ও মনোরম। গেট পেরিয়ে প্রথমেই প্রবেশ করলাম বাংলার টেরাকোটা সমৃদ্ধ প্রাচীন অনন্ত বাসুদেব মন্দিরটিতে। পোড়ামাটির কাজে সজ্জিত এই মন্দিরের আদল অনেকটা বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলোর মতো। বিষ্ণুপুরের মন্দির যে সময় তৈরি হয়েছিল, সে সময়ই তৈরি এই অনন্ত বাসুদেব মন্দির।

অনন্ত বাসুদেব মন্দির
১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দে রাজা নৃসিংহদেব এর পিতা রামেশ্বর রায় এই টেরাকোটার কারুকার্য খচিত একরত্ন বিষ্ণু মন্দিরটি নির্মাণ করেন, যেটি এখন অনন্ত বাসুদেব মন্দির নামে পরিচিত। মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার ফলকে পৌরাণিক যুগের সামাজিক আচার ব্যবহার, দেব দেবী, কিন্নর কিন্নরী, পশু পক্ষী, জীব জন্তুর প্রতিকৃতি ইত্যাদি নানারকম কারুকার্য দেখতে পাওয়া গেলো।

মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কারুকার্য
অনন্ত বাসুদেব মন্দিরের পূর্ব দিকে রয়েছে হংসেশ্বরী মন্দির। তান্ত্রিক যোগসাধনার প্রত্যক্ষ স্থাপত্য নিদর্শন হল এই হংসেশ্বরী মন্দির। তন্ত্রমতে তৈরি এই পাঁচ তলা মন্দিরটির গঠনপ্রণালীতে মানবদেহের পাঁচটি নাড়ির পরিচায়ক হিসাবে যৌগিক ষটচক্রভেদের রহস্য প্রকাশিত হয়েছে। মানবদেহের ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, বজ্রাক্ষ, চিত্রিণী এই পাঁচটি নাড়ীসূত্রের মতো কুণ্ডলিনী শক্তিরূপে তৈরি মন্দিরটি পাঁচতলা। মন্দিরের ছোট বড় মোট তেরোটি চূড়া যেন পদ্মের কুঁড়ির আদলে সহস্র পাঁপড়ি দিয়ে তৈরি। রাজা রামেশ্বর রায় এর প্রপৌত্র নৃসিংহ দেব ১৭৯৯ খ্রীস্টাব্দে এই মন্দিরটির নির্মান কার্য শুরু করেন। কিন্তু ১৮০২ খ্রীষ্টাব্দে মন্দিরের দ্বিতীয়তল তৈরি হওয়ার সময় তিনি পরলোকগমন করেন এবং মন্দিরের কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। পরবর্তীকালে নৃসিংহ দেবের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর পত্নী রাণী শঙ্করী ১৮১৪ খ্রীস্টাব্দে তাঁর এই অসমাপ্ত মন্দিরটির কার্য সম্পূর্ণ করে হংসেশ্বরী দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেন। হংসেশ্বরী মন্দিরের অনুরূপ মন্দির পশ্চিমবঙ্গে আর কোথাও দেখা যায় না।

হংসেশ্বরী মন্দির
চলে এলাম সামনে খোলা বাঁধানো প্রশস্ত চত্বরে। ভাইফোঁটার দিন হাওয়ায় মন্দির চত্বরে পুণ্যার্থীদের ভিড় দেখা গেলো। মন্দিরের সামনের ভাগে নাটমন্দির অংশে রাজস্থানী ঘরানার চিত্র ও নান্দনিক কারুকার্য গুলো বিশেষভাবে নজর কাড়ে। মন্দিরের ভেতরে সহস্রদল পদ্মের উপর ত্রিকোণ বেদী। সেই বেদীর পঞ্চমুন্ডি আসনের উপর যোগনিদ্রায় শায়িত মহাদেবের নাভিকুণ্ডু থেকে বেরিয়ে আসা পদ্মের উপর মায়ের অবস্থান। নীলাবর্ণা মায়ের মূর্তি তৈরি হয়েছে নিম কাঠ দিয়ে।

নাট-মন্দির
» প্রয়োজনীয় তথ্য

মন্দির খোলা থাকে সকাল সাতটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত এবং বিকাল চারটে থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। রাত্রিতে বন্ধ হওয়ার পরে আর কোনো কারণেই খোলা হয় না। হংসেশ্বরী দেবীর মন্দিরে নিত্য পুজো ও অন্নভোগের ব্যবস্থা আছে। ইচ্ছে হলে সপ্তাহের যেকোনো দিন ভোগ নিবেদন করা যায়। নিত্য পূজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল দশটায় এবং পুষ্পাঞ্জলি সকাল এগারোটায়। অন্নভোগ প্রসাদের জন্য সকাল দশটার মধ্যে কুপন সংগ্রহ করতে হবে, অগ্রিম কুপন দেওয়া হয় না। দুপুর সাড়ে বারোটায় মায়ের ভোগ নিবেদনের পর অন্নভোগ বিতরণ শুরু হয় এবং দুপুর দেড়টার মধ্যে গ্রহণ করতে হবে। দুপুরে মূল মন্দিরে প্রবেশে কোন বাধা নেই কিন্তু গর্ভগৃহ বন্ধ থাকার কারনে তখন মায়ের বিগ্রহ দেখা যায় না। জুতো পরে মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ। এখানে মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে জুতো রাখার সুবন্দোবস্ত আছে এবং মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে স্নানের ব্যবস্থাও আছে।

» পথ নির্দেশিকা
© ছবি ও লেখাঃ- অরবিন্দ পাল (তথ্যসূত্রঃ- 'বাঁশবেড়িয়া বা বংশবাটি' - মুনীন্দ্র দেব রায়, 'হুগলি জেলার ইতিহাস' - সুধীর কুমার মিত্র)
Arabinda Pal
0 Comments
Share This Post :

You Might Also Like

No comments:

Post a Comment

[name=Arabinda Pal] [img=https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEia50rmuKEAcbGUbQKvAbzUmdviiIhm-LeVlsEEdFx_xtGfyvx8O02yFVuJemgswzSA8PoMcN-XW0AcinKr9iq28lHK43Z4TFFyL7pJyGGxLNx9LGn0cLvPz0lUJzNrWBo9n_NyxGLjDII/h120/IMG_2788.jpg] [description=পর্যটক হিসাবে নয়, একজন ভ্রমণকারী হিসাবে বেড়ানোটা আমার কাছে একটা নেশা এবং ফটোগ্রাফিতেও আমার ভীষণ শখ। তাই একজন ভ্রমণকারী হিসাবে আমার এই ব্লগে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা ও ছবিগুলো যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনাদের মতামত কমেন্টসের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।] (facebook=https://www.facebook.com/groups/2071066419824586/user/100002484831922) (twitter=Twitter Profile Url) (instagram=https://www.instagram.com/arabindapal2020/) (bloglovin=Blogvin Profile Url) (pinterest=https://www.pinterest.com/arabindapalbrb/) (tumblr=Tumblr Profile Url)

Follow @Arabinda Pal